ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪ ||  চৈত্র ১৫ ১৪৩০

একদিনেই ঘুরে আসুন রূপসী ঝরনায়

ভ্রমণ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১১:৫৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

নাম তার রূপসী ঝরনা। প্রথম দেখায় প্রেমে পড়বে যে কেউ। সৌন্দর্যের পসরা বিছিয়ে রেখেছে ঝরনাটি। সব ধরনের মানসিক চাপ কিংবা ক্লান্তি সবই কেটে যাবে রূপসী ঝরনায় পা রাখতেই।

রূপসী ঝরনার রূপের জাদু আপনাকে পাগল করবে। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের আরেক নাম বড় কমলদহ রূপসী ঝরনা।

আঁকাবাঁকা গ্রামীণ সবুজ শ্যামল মেঠো পথ পার হয়ে পাহাড়ের পাদদেশে গেলেই শোনা যাবে ঝরনার পানি গড়িয়ে পড়ার অপরূপ নুপুরধ্বনি। দু’পাশে সুউচ্চ পাহাড়।

সাঁ সাঁ শব্দে উঁচু পাহাড় থেকে অবিরাম শীতল পানি গড়িয়ে যাচ্ছে ছড়া দিয়ে। মেঘের মতো উড়ে আসা শুভ্র ঝরনা পানি আলতো করে ছুঁয়ে দেখলেই এর শীতল পরশ মুহূর্তে ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।

টলটলে শান্ত পানির চুপচাপ বয়ে চলার ধরনই বলে দেবে এর উৎস অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পর্যটকেরা আবিষ্কার করবেন লাল আর নীল রঙের ফড়িঙের মিছিল!

যত দূর পর্যন্ত ঝিরিপথ গেছে, তত দূর পর্যন্ত তাদের মন মাতানো ঝিঁ ঝিঁ পোকার গুঞ্জন শোনা যায়। রূপসী ঝরনার পানিতে গোসল করার লোভ সামলানো কারো পক্ষেই সম্ভব নয়।

বছরের পর বছর ঝরনার পানি গড়িয়ে যাচ্ছে এই ছড়া বয়ে। কয়েক বছর পূর্বে রূপসী ঝরনা নামে আবিষ্কার হয়েছে এটি। মিরসরাই উপজেলার সর্ব দক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ের কোল অবস্থিত এক দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্যসুন্দর জলপ্রপাত এটি।

যারা একদিনেরে ভ্রমণে দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘুরতে চান, তাদের জন্য সেরা হতে পারে রূপসী ঝরনা। কিছুটা ট্রেকিংও হবে আবার ঝরনার অপলুপ সৌন্দর্য মুগ্ধও হতে পারবেন।

মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝরনাগুলোর চেয়ে এই ঝরনায় যাওয়া অনেকটাই সহজ। সৌন্দর্যে কোনো অংশেই খৈয়াছড়া, নাপিত্তাচড়া ঝরনার চেয়ে কম না।

এই ঝরনার যাওয়ার পথে দৃষ্টিনন্দন ছরা, দু’পাশের দণ্ডায়মান পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মতো ঢালু ছড়া, তিনটি ভিন্ন ভিন্ন অপরূপ ঝরনা রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্যান্য ঝরনা থেকে আলাদা করেছে।

এই ঝরনার নাম শুনে প্রতিদিন ছুটে আসছে শতশত ভ্রমণ পাগল মানুষ। ফেনী শহর থেকে প্রথমবারের মতো রূপসীতে ছুটে এসেছেন মাইনুল, রনি, মুকিত ও সালাহ উদ্দিন।

তারা আক্ষেপ করে বলেন, এতো সুন্দর ঝরনা আগে কেন এলাম না। প্রথমবার এসে এতো ভালো লাগছে যা বুঝাতে পারবোনা। কথা হয় রূপসীতে ঘুরতে আসা দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার দুই কলেজ ছাত্র আরাফাত ও জিহানের সঙ্গে।

তারা বলেন, ‘আমরা ফেইসবুকে দেখে এখানে ছুটে এসেছি। এসে অনেক ভালো লাগছে। দেশের অনেক ঝরনায় গিয়েছি। কিন্তু চমৎকার ঝরনা কোথাও দেখিনি। এক কথায় রূপসী ঝরনার রূপ আমাদের পাগল করে দিয়েছে।’

মিরসরাইয়ের অন্যতম স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সোনালী স্বপ্ন’র সভাপতি মঈনুল হোসেন টিপু বলেন, ‘সম্প্রতি আমরা রূপসী ঝরনায় ঘুরতে গিয়েছিলাম। মিরসরাইয়ে অনেকগুলো পাহাড়ি ঝরনা আছে, সবগুলোর সৌন্দর্যই মুগ্ধ হওয়ার মতোই।’

‘তবে অন্য ঝরনাগুলোতে যেতে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়। আর মহাসড়ক থেকে মাত্র দেড় কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই দেখে মেলে রূপসী ঝরনার। এই ছড়ার তিনটি ধাপ আছে। বড় কমলদহ ঝরনা, ছাগলকান্দা ও পাথরভাঙ্গা ঝরনা।

জানা গেছে, মিরসরাইয়ের বড় দারোগারহাট বাজারের সামান্য উত্তরের ব্রিকফিল্ড সড়ক ধরে পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার পথ পাড়ি দিলেই রেললাইন। রেললাইন পেরুলেই মেঠো পথ, দু’পাশে সবুজ ফসলি মাঠ, সামনে পাহাড়ের বিশালতা।

আর সেই মেঠো পথ ধরে একটু হাঁটলেই পাহাড়ের পাদদেশ। বাম দিকে ৫০ গজ হাঁটলেই বিশাল ছড়া। যেটি রূপসীর প্রবেশপথ। রূপসীর প্রথম ধাপটা বড় একটি ঝরনার মতো।

অনেকটা খাড়া তবে ঢালু। বর্ষায় পুরো ঝরনা বেয়ে পানি পড়ে। শুষ্ক মৌসুমে শুধু দক্ষিণ দিকটায়। অনেকে সেখানে যাত্রার ইতি টানে। মনে করে রূপসী শুধু এটাই। অথচ এটি রূপসীর বাইরের রূপ। ভেতরের রূপ আরো বেশি সুন্দর। রূপসীর প্রথম ধাপের ঝরনা বেয়ে উপরে উঠলে খোলা একটা জায়গা। তারপর একটা বড় পাথর।

এই পাথরের মাঝ দিয়ে অনবরত পানি ঝরছে। ১০ ফুটের খাড়া পাথরটি বেয়ে উঠতে পারলেই এবার অন্যরকম এক সৌন্দর্য। বিশাল ছরা তবে বেশ আঁকাবাঁকা। ঠিক বয়ে চলা কোন নদীর মতো।

ছরা দিয়ে হাঁটার সময় চোখে পড়বে হরেক রকম পাহাড়ি বৃক্ষ, ফুল, ফল, লতা। ছড়ার বুক ছিড়ে হাঁটতে হাঁটতে মনে হবে যেন কোনো গুহার মধ্য দিয়ে হেঁটে হেঁটে রহস্যভেদ করা হচ্ছে। আর ছরার মধ্য দিয়ে স্বচ্ছ পানির বয়ে চলার কল কল ধ্বনি, মুগ্ধ করবে শুধুই।

যেতে যেতে দেখা যেতে পারে বানরের দল। বন্যমোরগের ছুটাছুটি। ছরা ধরে হাঁটতে হাঁটতে পাওয়া যাবে দুটি পথ। এক পথের ছড়া বড়, আরেক পথের ছোট। বড় ছড়া ধরে একটু এগুলোই রূপসীর মূল ঝরনা।

অনেক দূর থেকেও কানে ভেসে আসে ঝরনার অবিরাম পানি পড়ার সুমধুর ধ্বনি। ৫০ ফুট উঁচু পাথর বেয়ে পড়ছে জল, অনবরত, শত বছর ধরে।

ওহ! রূপসী। কি অনিন্দ্যসুন্দর তোমার রূপ। তব্দা হয়ে যাওয়ার মতো সৌন্দর্য। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকার মতো জৌলুস। পানির প্রবাহে কি গতিময়তা। পাথর বেয়ে পড়া স্বচ্ছ জলরাশি। তুমিই তো সত্যিকারের রূপসী।

ভ্রমণপ্রিয় দশর্নাথীরা সঙ্গে হালকা খাবার ও পানি নিয়ে যেতে পারেন সেখানে। কারণ যাওয়া ,আসা ও ঝরনা উপভোগ সব মিলিয়ে অন্তত ঘণ্টা তিনেক সময় লাগবেই।

যারা প্রথমবারের মতো যাবেন তারা স্থানীয় পরিচিত কাউকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নেবেন। না হলে পথ চিনতে কষ্ট হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থান হতে যে কোনো বাস যোগে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বড়দারোগাহাট বাজারে নামবেন। এরপর সিএনজি অটোরিক্সা যোগে বাজারের উত্তর পাশের ব্রিকফিল্ড সড়ক দিয়ে পাহাড়ের পাদদেশ পর্যন্ত যাবে। এরপর পায়ে হেঁটে ঝরনায় যাওয়া যাবেন। অথবা যে কোনো বাস থেকে ব্রিকফিল্ড সড়কের মাথায় নেমে অটোরিকশা ছাড়া আধা কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যেতে পারবেন।

কমলদহ বাজারে বাজারে বিখ্যাত ড্রাইভার খাওয়ার হোটেল আছে। আরো ভালো হোটেলে খাওয়ার জন্য সীতাকুন্ড উপজেলা সদরের বিভিন্ন রেষ্টুরেন্ট আছে।

দুর-দুরান্ত থেকে আসা পর্যটকরা থাকা ও খাওয়ার জন্য যেতে পারেন ঝরনা এলাকা থেকে গাড়ি যোগে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ।

চট্টগ্রাম শহরের প্রবেশ মুখে এ কে খান ও অলংকারে কুটুম্ববাড়ি রেস্তোরায়ও খেতে পারেন। থাকার জন্য এ কে খানে মায়ানী রিসোর্ট ও অলংকারে রোজ ভিও, ড্রিম লাইট হোটেলে রুম ভাড়া নিতে পারেন।

সর্বশেষ
জনপ্রিয়