ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

উত্তরা গণভবন : অন্যতম আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো হৈমন্তীগাছ

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৩৩, ১৫ অক্টোবর ২০২২  

উত্তরা গণভবন : অন্যতম আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো হৈমন্তীগাছ

উত্তরা গণভবন : অন্যতম আকর্ষণ বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো হৈমন্তীগাছ

ঢাকার বাইরে প্রধানমন্ত্রীর একমাত্র বাসভবন দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন। ১৭৩৪ সালে নির্মিত স্থাপত্যকলার অন্যতম নিদর্শন এই রাজবাড়ি। দেশি-বিদেশি পর্যটকদেরও আকর্ষণ করে থাকে এটি। প্রাচীন এই স্থাপনাটি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও ছিল পছন্দের স্থান। এখানে তিনি একটি বিরল প্রজাতির হৈমন্তীগাছ লাগিয়েছিলেন, যা এখনো টিকে আছে এবং পর্যটকদের আকৃষ্ট করে যাচ্ছে।

নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ জানান, এখন এই রাজবাড়ির ৮০ শতাংশ স্থান দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো হৈমন্তীগাছ, কবি ইন্দুপ্রভা দেবীর চিঠি, কবিতাসহ রাজরাজড়াদের আমলের বিভিন্ন জিনিসপত্র দিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে সংগ্রহশালা, যা এখানে আসা দর্শনার্থীরা দেখতে পারেন। এ ছাড়া মিনি চিড়িয়াখানা, বাগান ও পাখিদের জন্য অভয়াশ্রম করে গণভবনকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলা হয়েছে।

নাটোর শহর থেকে তিন কিলোমিটার উত্তরে অবস্থান উত্তরা গণভবনের। সুদৃশ্য কারুকার্যখচিত প্রধান ফটক, রাজ প্যালেস, ইতালিয়ান গার্ডেন এই রাজপ্রাসাদের অন্যতম আকর্ষণ। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে ‘উত্তরা গণভবন’ হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই নিরাপত্তার কারণে গণভবনে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ ছিল। তবে স্থানীয়দের দাবিতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবালয়ের সিদ্ধান্তে ২০১২ সালের ২৫ অক্টোবর গণভবন সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়।

উত্তরা গণভবনের হিসাব সহকারী নুর মোহাম্মদ জানিয়েছেন, বর্তমানে জনপ্রতি ২০ টাকা প্রবেশ মূল্যের বিনিময়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গণভবন দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তবে ইতালিয়ান গার্ডেন এবং ভবনের ভেতরের অংশ দেখতে আগেভাগেই জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়।

রাজবাড়ির দৃষ্টিনন্দন মূল ফটকের ওপরে রয়েছে ইতালির ফ্লোরেন্স থেকে আনা বিশাল ঘড়ি। এখনো সঠিক সময় দিচ্ছে ঘড়িটি। এর ঘণ্টাধ্বনিও দূর থেকে শোনা যায়। প্রতি বুধবার দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন ব্যক্তি চাবি ঘোরান।

রাজবাড়ির চারদিকে রয়েছে সুউচ্চ প্রাচীর ও সুগভীর পরিখা। রাজবাড়ির ভবনগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধান প্রাসাদ ভবন, কুমার প্যালেস, কাচারি ভবন, তিনটি কর্তারানী বাড়ি, রান্নাঘর, মোটর গ্যারেজসহ বিভিন্ন স্থাপনা।

প্যালেসের দক্ষিণে রয়েছে ইতালিয়ান গার্ডেন। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যবান মার্বেল পাথরে কারুকাজ করা ভাস্কর্য আর দেশি-বিদেশি নানা জাতের শোভাবর্ধক গাছ। ভাস্কর্যগুলো পাথরখণ্ড কেটে তৈরি।

প্রধান ভবনের সামনে রয়েছে ১৮৫৪ সালে ব্রিটিশদের নির্মিত দুটি কামান। এ ছাড়া রাজবাড়িতে রয়েছে আরও চারটি কামান। মূল রাজপ্রাসাদে প্রবেশের পথে সিঁড়ির দুই পাশে দুটি কালো কৃষ্ণমূর্তি ছিল। একটি ভেঙে যায়। অন্যটি বর্তমানে সংগ্রহশালায় রয়েছে।

নাটোর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি রনেন রায় জানান, দিঘাপতিয়া রাজবাড়িকে বঙ্গবন্ধু অনেক পছন্দ করতেন। সে জন্য তিনি এই স্থাপনাকে প্রধানমন্ত্রীর দ্বিতীয় বাসভবন ও উত্তরা গণভবন হিসেবে ঘোষণা করেন। এখানে তার নেতৃত্বে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়েছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও স্মৃতিবিজড়িত স্থান এই উত্তরা গণভবন। তাই অতীতের ঐতিহ্য রক্ষায় আবারও এখানে মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক আয়োজন করা হোক, এটা নাটোরবাসীর প্রাণের দাবি।

রনেন রায় আরও জানান, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবনে এসেছিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এসেছিলেন। তখন বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবন চত্বরে একটি হৈমন্তীগাছ রোপণ করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নিজ হাতে লাগানো হৈমন্তীগাছটি এখন দর্শনার্থীদের অন্যতম আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়