ঢাকা, বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ: বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করার আইন

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:০৯, ৪ জুলাই ২০২২  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ইনডেমনিটি অধ্যাদেশের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে বিচারহীনতার সংস্কৃতির এক কলঙ্কিত অধ্যায়ের সূত্রপাত ঘটে। ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারবর্গকে নির্মমভাবে হত্যাকারীদের দায়মুক্তি ও পুরস্কৃত করার জন্য এ অধ্যাদেশ জারি করে খন্দকার মোশতাক ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান।

অধ্যাদেশের প্রথম অংশে বলা হয়, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বলবৎ আইনের পরিপন্থী যা কিছুই ঘটুক না কেন, এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টসহ কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।’ দ্বিতীয় অংশে উল্লেখ রয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি উল্লিখিত ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে যাদের প্রত্যয়ন করবেন তাদের দায়মুক্তি দেওয়া হলো। অর্থাৎ তাদের বিরুদ্ধে কোনো আদালতে মামলা, অভিযোগ দায়ের বা কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাওয়া যাবে না।’

আর রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী এনে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইনডেমনিটি অধ্যাদেশসহ চার বছরে সামরিক আইনের আওতায় সকল অধ্যাদেশ, ঘোষণাকে আইনি বৈধতা দেন জিয়াউর রহমান। ১৯৭৯-এর মাধ্যমে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে বৈধতা দেয়ায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীরা পাকা-পোক্তভাবে দায়মুক্তি পেয়ে যায়। সেইসাথে সংবিধান (পঞ্চম সংশোধনী) আইন, ১৯৭৯-এর ক্ষমতাবলে ভবিষ্যতে কেউ যাতে ১৫ আগস্ট খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারে সে ব্যবস্থাটিকে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করেন।

এ বিষয়ে দেশের আইনজ্ঞরা বলেন, জিয়াউর রহমানের সরকার সাংবিধানিক বৈধতা না দিলে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল সামরিক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গেই ১৫ অগাস্টের খুনিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যেত। কিন্তু জিয়াউর রহমান ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, ভবিষ্যতে কেউ যেন ব্যবস্থা না নিতে পারে পাকাপাকিভাবে সে ব্যবস্থাও করে দেন। শুধু তাই নয়- খুনিদের পুরস্কৃত করে রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল। বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিও দিয়েছিলেন জিয়া।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, রাষ্ট্রযন্ত্র সর্বোচ্চ অবস্থান গ্রহণ করে আইন প্রণয়ন করে সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যাকাণ্ডের বিচার বন্ধ করে দিয়ে পুনরায় পাকিস্তানি শাসনব্যবস্থা কায়েম করার পথে হেঁটেছিল জিয়া। তখন এমন এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি করেছিল যে, বঙ্গবন্ধুর খুনিরা প্রকাশ্যে বাহাদুরি করে বেরিয়েছে কিন্তু কেউ কিছু বলার সাহস পায়নি। নিহতদের অধিকার নিয়ে কথা বলার সাহসটুকুও কারো ছিল না। জিয়ার পর এরশাদ খালেদাও একই নীতি অনুসরণ করেছিল। সেজন্যই দীর্ঘ ২১ বছর জাতি এক ভয়াবহ সময় পার করেছে।

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়