ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

আররের ‘রাজকীয় পোশাক’ তৈরি হয় বগুড়ায়

নিউজ ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৭:১৬, ২২ ডিসেম্বর ২০২২  

আররের ‘রাজকীয় পোশাক’ তৈরি হয় বগুড়ায়

আররের ‘রাজকীয় পোশাক’ তৈরি হয় বগুড়ায়

বগুড়ার এক গ্রামে দীর্ঘ বছর ধরে তৈরি হচ্ছে আরব দেশের ‘রাজকীয় পোশাক’ বিশত। বিশেষ এই পোশাক  তৈরিতে সুতাসহ সব উপকরণই দেশের বাহির থেকে আমদানি করা হয়। পরে এখানকার তৈরি বিশত পাঠানো হয় কাতারে। এছাড়াও সৌদি আরব, ওমান, দুবাইসহ মধ্যপাচ্যের আরো অনেক আরব দেশগুলোতে বগুড়ার বিশত রফতানি করা হয়।  

বগুড়ার সদরের এরুলিয়া ইউপির বানদিঘী হাঁপুনিয়া গ্রামে রয়েছে বিশত তৈরির কারখানা। এই প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘বেস্ত আল-নুর এন্টারপাইজ’। ২০১৩ সালে এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলেন নুর আলম।

বেস্ত আল নুর এন্টারপ্রাইজের ব্যবস্থাপক মো. মানিক পাইকার বলেন, ‘প্রায় ২৭ বছর আগে জীবিকার তাগিদে সৌদি আরবে পাড়ি জমান নুর আলম। সেখানে বিশত তৈরির এক কারখানায় কাজ শুরু করেন তিনি। সৌদি আরবে বছর পাঁচেক কাজ করেন তিনি। এরমধ্যেই বিশত তৈরিতে দক্ষ হয়ে উঠেন নুর আলম। পরে সৌদি আরব থেকে কাতারে যান তিনি।’

তিনি আরও জানান, ‘কাতারের ‘বিশত আল সালেহ’ নামে প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করেন নুর আলম। এক পর্যায়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে নিজ জেলায় ফিরে এসে বিশত তৈরি করা শুরু করেন। একই সঙ্গে নিজের কারখানায় তৈরি করা বিশত কাতারের বিশত আল সালেহ প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন। বর্তমানে তাদের প্রতিষ্ঠানে ৩০ জন কারিগর রয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৪ জন নারী ও ১৬ জন পুরুষ।’

কারিগররা বলেন, প্রথমদিকে ১০-১২ জনকে নিয়ে বিশত তৈরির প্রশিক্ষণ করান নুর আলম। তাদের প্রশিক্ষিত করার পর থেকেই বিশত তৈরি করে কাতারে রফতানি শুরু করা হয়। নুর আলম কাতারের বিশত আল সালেহ প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। তবে বর্তমানে ওই প্রতিষ্ঠানে শুধু বিশত সরবরাহ করেন তিনি। এ কারণে বছরের এক থেকে দুইবার কাতারে যান নুর আলম।

বেস্ত আল-নুর এন্টারপাইজের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই কারিগর হিসেবে কাজ করছেন শাকিল হোসেন।

তিনি বলেন, ‘সাধারণত মাসে ৪০-৪৫ পিস বিশত তৈরি করা হয়। ৫০ হাজার টাকা থেকে ৯০ হাজার টাকায় প্রতিটি বিশত বিক্রি করা হয়। এছাড়াও প্রয়োজন অনুযায়ী মাসে বিশত তৈরির সংখ্যা বাড়ানো হয়।’

কারিগররা বলেন, বিশত তৈরির উপকরণ স্বর্ণ ও রৌপ্য প্রলেপযুক্ত সুতা, জরি ও নরম পাতলা কাপড় ব্যবহার করা হয়। এসব  উপকরণ আমদানি করতে হয়। তুরস্ক, ভারত, সিরিয়া থেকে বিশত তৈরির উপকরণ নিয়ে আসা হয়। আর বিশত’র কাপড় জাপানের। মাঝে মধ্যে সৌদি আরব থেকেও বিশত’র কাপড় আমদানি করা হয়।

কারিগর শাকিল হোসেন বলেন, ‘বছর পাঁচেক আগে কারখানায় নারী কারিগর নেয়া হয়। তারা প্রতিমাসে ১২-১৪ হাজার টাকা আয় করেন। আর পুরুষ কারিগররা ২২-২৪ হাজার টাকা আয় করেন।’

কারিগররা বলেন, একটি বিশত তৈরি করতে সাতটি ধাপ পার করতে হয়। প্রথমে বাতানার কাজ করতে হয়। এরপরে জরির কাজ। যাকে বলা হয় হেলা। পরে ধাপগুলো পর্যায়ক্রমে তুক্ত স্রিপ,  ব্রুজ, মাসকার, বরদাক ও সিলালা। এরপরেই তৈরি হয় একটি বিশত। এক ব্রিজ তৈরি করতে সাত কারিগরের সাত দিন সময় লাগে। কিন্তু তাদের কারিগরের সংখ্যা বেশি। এ কারণে তারা দিনে ৫-৭ টি বিশত তৈরি করতে পারেন। কিন্তু বর্তমানে চাহিদা অনুযায় বিশত তৈরি এবং রফতানি করা হচ্ছে। তাদের তৈরি বিশত কাতার, সৌদি আরবসহ মধ্যপাচ্যের অনেক আরব দেশে পাঠানো হয়।

বেস্ত আল-নুর প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. মানিক পাইকার বলেন, ‘চাহিদা অনুযায়ী বিশত তৈরি করে কাতারের ‘বিশত আল সালেহ’ প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করেন তারা। সেখান থেকে সৌদি আরবসহ অনেক দেশে তাদের তৈরি বিশত বিক্রি হয়। বিশত আল সালেহ প্রতিষ্ঠানটি নিজস্বভাবে বিশত তৈরি করেন। পাশপাশি আমরাও ওই প্রতিষ্ঠানে বিশত সরবরাহ করি। এছাড়া  চাহিদা অনুযায় মধ্যপাচ্যের বিভিন্ন আরব দেশে আমরা বিশত রফতানি করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘বিশতকে আরব দেশগুলোতে সাধারণত ‘রাজকীয় পোশাক’ বলা হয়। কাতার সৌদি আরবসহ মধ্যপাচ্যের অন্য দেশের সম্মানিত ব্যক্তিরা বিশত পড়েন। এছাড়াও বিভিন্ন উৎসব-অনুষ্ঠানে আরব দেশগুলোতে এই পোশাক ব্যবহার করা হয়।’

সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়