ঢাকা, শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

আগামী জুন পর্যন্ত থাকবে স্বস্তিদায়ক রিজার্ভ

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:৪২, ১৯ মার্চ ২০২৩  

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

ধীরে ধীরে বৈশ্বিক মন্দার প্রভাব কাটিয়ে উঠছে বাংলাদেশ। একটু একটু করে প্রশমিত হতে শুরু করেছে চলমান ডলার সংকট। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়সহ অর্থনীতির বেশ কিছু সূচক ইতিবাচক ধারায় প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকা ও ডলার সংকট এখনো রয়েই গেছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বাংলাদেশ ব্যাংককে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়াতে বলেছে। আর সে কারণেই খুব হিসেব-নিকেশ করে ডলার খরচ করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার বলেছেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে তারা দুশ্চিন্তা করছেন না। আগামী জুন পর্যন্ত যাতে রিজার্ভ স্বস্তিদায়ক থাকে সেভাবেই এখন ডলার খরচ করা হচ্ছে’ বলে জানিয়েছেন তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেব অনুযায়ী আগামী জুন মাস নাগাদ রপ্তানি আয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হতে পারে। আর চলতি অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ হতে পারে ৫৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এছাড়া জুন মাসে রেমিট্যান্স ৪ শতাংশ বেড়ে চলতি অর্থবছরে প্রবাসী আয় ২৩ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি হতে পারে। এই অর্থবছরে আমদানি ব্যয় ৮০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হাবর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে ডলার সংকটের সমাধান রাতারাতি হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ‘দেশে এখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। গত ৭ মার্চ এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) কাছে আমদানির দায় হিসেবে রিজার্ভ থেকে ১০৫ কোটি ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। এর ফলে ১৫ মার্চ রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩১ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারে। এ রিজার্ভ দিয়ে প্রায় চার মাসের (প্রতি মাসে ৮ বিলিয়ন হিসাবে) আমদানি ব্যয় মেটানো যাবে। যদিও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের আলোকে হিসাব করলে রিজার্ভ এখন ২৩ বিলিয়নের কিছু বেশি। এই অবস্থার মধ্যেও আইএমএফের পূর্বাভাস বলেছে, আগামী অর্থবছর থেকে ধারাবাহিকভাবে রিজার্ভ বাড়বে। আর ২০২৬-২৭ অর্থবছর শেষে দেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ৫০ বিলিয়ন ডলার বা ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’ অর্থনীতিবিদরাও বলছেন বৈশ্বিক বাস্তবতায় এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অর্থনীতি সঠিক পথেই আছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেছেন ‘রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়সহ বাংলাদেশের অর্থনীতির অধিকাংশ সূচকই ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। সবচেয়ে খুশির খবর হলো দীর্ঘ সময়ের অতিমারির পরও আমাদের উৎপাদনে কোনও সমস্যা হয়নি। এখন পর্যন্ত অর্থনীতির সব সেক্টরেই প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমাদের ব্যালেন্স অব পেমেন্টে কিছুটা চাপ আছে। এই চাপ মূলত আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে। আমদানি ব্যয় বেশি হওয়ার মূল কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সুদহার বাড়ানোর কারণে বিশ্ব বাজার থেকে আমাদের বেশি দামে পণ্য কিনতে হচ্ছে। এতে ডলারের কিছুটা সংকট থাকলেও বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। এখন পর্যন্ত যে রিজার্ভ আছে তা দিয়ে আগামী চার থেকে পাঁচ মাস চলা যাবে।’

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, ‘আমি আশাবাদী ধীরে ধীরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। সামনে দুটি ঈদ আছে। কয়েক দিন পর শুরু হচ্ছে রমজান মাস। এই রমজান ও ঈদ উপলক্ষ্যে প্রবাসীরা বেশি বেশি রেমিট্যান্স পাঠাবেন। রমজানের পর কোরবানির ঈদেও প্রবাসীরা বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠিয়ে থাকেন। পাশাপাশি রপ্তানিতেও ইতিবাচক ধারা অব্যাহত আছে। বিদেশি ঋণের বড় কিস্তি পরিশোধ যদি না থাকে, তাহলে জুন পর্যন্ত রিজার্ভ থাকবে স্বস্তিদায়ক।’

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলেছে, ‘নিয়ন্ত্রণমূলক ব্যবস্থার কারণে আমদানি কমছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৮ মাসে ৩ হাজার ৭০৭ কোটি ডলারের রপ্তানি আয় হয়েছে, যা প্রতি মাসে গড়ে ৪৬৩ কোটি ডলার। নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারিতে গড়ে ৫২০ কোটি ডলার রপ্তানি হয়েছে। একই সময়ে বেড়েছে রেমিট্যান্স।’

অন্যদিকে, ফেব্রুয়ারিতে প্রবাসী আয় বেড়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ কোটি ডলার বেশি। গত মাসে দেশে এসেছে ১৫৬ কোটি ডলার। আগের মাস জানুয়ারিতে এসেছিল ১৯৬ কোটি ডলার। ডিসেম্বরে এটি ছিল প্রায় ১৭০ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়) যাতে বৈধ পথে দেশে আসে-তা নিশ্চিত করতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে প্রবাসী আয়ে গতি বেড়েছে। সামনে রমজান ও দুটি ঈদ থাকায় রেমিট্যান্সের এই ধারা চলতি মার্চ ও এপ্রিলেও অব্যাহত থাকবে বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা আরও বলছেন, ‘আগামী জুন পর্যন্ত বিদেশি ঋণের বিপরীতে বড় কোনও কিস্তি পরিশোধ নেই। ফলে আগামী মে মাস পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ ধীরে ধীরে বাড়বে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের আশা, এপ্রিল শেষে রিজার্ভ ৩১ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ৩২ বিলিয়নে দাঁড়াবে। তবে আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রিজার্ভ থেকে আকু পেমেন্ট বা এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (এসিইউ) কাছে প্রায় দেড় বিলিয়ন ডলারের মতো আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এতে আগামী মে মাস পর্যন্ত রিজার্ভ ৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরেই থাকবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে অবস্থায় আছে মার্চ শেষে প্রায় সেই অবস্থাতেই থাকবে। এপ্রিলে একটু বাড়তে পারে। তবে মে মাসে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের কাছে আমদানি বিল পরিশোধ করতে হবে। এ কারণে এখন রিজার্ভ একটু একটু বাড়লেও মে শেষে ৩২ বিলিয়ন ডলারের আশপাশেই থাকবে। এছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য নেওয়া বিদেশি ঋণ পরিশোধ করার পাশাপাশি বাজার স্বাভাবিক রাখতে ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি অব্যাহত থাকবে।’

অন্যদিকে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, ‘বাংলাদেশে ডলার সংকটের অন্যতম কারণ হলো দেশের অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতা এবং স্থানীয় পর্যায়ে কাঁচামাল ও পণ্য উৎপাদন না হওয়া। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ পড়েছে। মূলত খাদ্যশস্য থেকে শুরু করে বাংলাদেশকে চিনি, ভোজ্য তেল, মসলা, পেট্রোলিয়াম পণ্য, সার, তুলা, সুতা, রাসায়নিক, শিল্পের যন্ত্রপাতি, সিমেন্ট ও ইস্পাত কারখানার কাঁচামালসহ প্রায় সব পণ্যই আমদানি করতে হচ্ছে।’ তবে অচিরেই এই অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব বলেও তারা মনে করছেন।

ব্যবসা বাণিজ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়