ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অটো শিম চাষে লাভবান হওয়ায় স্বপ্ন দেখছেন ঈশ্বরদীর কৃষকের

পাবনা প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ১২:০২, ২৩ জুলাই ২০২২  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

যে দিকে চোখ যায়, সেদিকেই মাঠের পর মাঠ শিমের ক্ষেতের দেখা মিলবে। শিমের লতাপাতার সবুজ সমারোহের মাঝে গোলাপি সাদা ফুল যে কারও নজর কাড়বে। এর মধ্যেই কিছু কিছু গাছে শিম ধরতে শুরু করেছে। আগাম অটো শিমে এখন স্বপ্ন বুনছেন ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষকরা। আগাম অটো শিম চাষে এখানকার কৃষকরা প্রতিবারই লাভবান হন। এবারও লাভবান হওয়ায় স্বপ্ন দেখছেন তারা। তাই তো অটো শিমের পরিচর্যায় চাষিরা মহাব্যস্ত। খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে চাষিরা এখন শিমের ক্ষেতে ফুল ও ফলের পরিচর্যায় সময় পার করছেন।

মুলাডুলি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, দেশের অন্যতম শিম উৎপাদনকারী এলাকা হিসেবে পরিচিত ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে এখন বেশ জোরেশোরেই চলছে আগাম শিম চাষ। জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝিতে আগাম শিম চাষের জন্য প্রস্তুতি শুরু করে চাষিরা। বর্ষা মৌসুমের বৃষ্টির পানি থেকে শিম গাছকে রক্ষা করতে জমিতে ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি উঁচু করে তৈরি করা হয়েছে বিট বা টিবি।

সে উঁচু বিটে তারা অটো শিম চাষ করেছেন। অটো জাতের শিম গাছ এরই মধ্যে মাচায় উঠে ফুলে ফুলে ভরে গেছে। আগামী ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই পুরোদমে এসব শিম বাজারে উঠবে। এখানকার চাষিরা অটো শিম চাষে প্রতিবছরই সফলতা পায় এখানকার চাষিরা। তাই তো প্রতিবছরই এ শিমের চাষ বাড়ছে। শিম চাষকে কেন্দ্র করে ঈশ্বরদীর মুলাডুলিতে গড়ে উঠেছে বিশাল বাজার। শিমের মৌসুমে প্রতিদিন গড়ে ২৫ থেকে ৩০ ট্রাক শিম ঢাকা, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশালসহ দেশের জেলা শহরগুলোতে পাঠানো হয়। 
মুলাডুলির বাঘহাচলা গ্রামের শিম চাষি কামাল হোসেন বলেন, আড়াই বিঘা জমিতে তিনি শিম চাষ করেছেন। প্রতিবিঘা চাষে খরচ হয় ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা। চাষ ভালো হলে বিঘাপ্রতি শিম বিক্রি হবে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, গত বছরই আগাম জাতের অটো শিম বাজারে প্রথম বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা কেজি দরে। ফলন ভালো হলে আর কৃষক ন্যায্য দাম পেলে লাভবান হবে। 

বেতবাড়িয়া গ্রামের কৃষক ইউনুস আলী বলেন, আগাম জাতের শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হয়েছে এখানকার কৃষকরা। শিম চাষে উৎসাহ বাড়ছে কৃষকদের। মুলাডুলি দৈনিক সবজি বাজার সমিতির উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বাবু বলেন, আগাম জাতের শিম চাষাবাদ শুরু হয়েছে। এখনও শিম বিক্রি শুরু হয়নি। আশা করছি, ২০ থেকে ২৫ দিনের মধ্যেই আগাম জাতের শিম বাজারে আসবে। 

মুলাডুলি ইউনিয়নের কৃষি উপসহকারী কর্মকর্তা মো. আলিউজ্জামান বলেন, অটো, ঘৃত কাঞ্চন ও রূপসী নামে আগাম জাতের শিম এখানে চাষাবাদ বেশি হয়। আগাম জাতের শিমে চাষিরা লাভবান হলেও এর ফলনে সার ও কীটনাশকের মাত্রা অতিরিক্ত প্রয়োগ করতে হয়। 

ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় ১১৩০ হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়। এর মধ্যে শুধু মুলাডুলি ইউনিয়নে ৮৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ হয়। ২০২১ সালে এ উপজেলায় ৮১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার বলেন, রাজধানীর বাজারে আগাম যে শিম পাওয়া যায়, সেটি উৎপাদন হয় ঈশ্বরদীতে। দেশের সবচেয়ে বেশি শিম এখানে চাষাবাদ হয়। আগাম শিম চাষে কৃষকরা অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহার করেন, যা স্বাস্থ্যর জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। সার ও কীটনাশক কম ব্যবহার করে কীভাবে আগাম শিম উৎপাদন করা যায়, সে বিষয়ে কৃষকদের নানা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন
সারাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত
সর্বশেষ
জনপ্রিয়