ছোট গল্প: কলিমুদ্দিনের বিয়ের কাণ্ড

মাঈন উদ্দিন আহমেদ

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১২:৪১ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

কলিমুদ্দিন বেপারীর বয়স একটু বেশি। বহু কষ্টে কন্যা পাওয়া গেল ছয় মাইল দূরের মলংচড়া গ্রামে। কন্যার দরিদ্র পরিবার। বিয়ের তারিখ ঠিক হলো মাঘ মাসের বিশ। রাতের চলন যাবে কন্যার বাড়ি। এশার নামাজের পরপরই বরযাত্রী পৌঁছে গেল। বিয়ে বাড়ির আলো—হারিকেন আর চাঁদের আলো। সবাইকে বসানোর ভালো ব্যবস্থা নেই। বরের জন্য কোনোরকম একটা চৌকিতে চাদর বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক আপ্যায়নের জন্য শরবত আর নানা রকম পিঠা দেওয়া হলো। কলিমুদ্দিন খাবার পাগল মানুষ৷ কোনো বাছাবাছি নেই। নাস্তার পর বাকি আনুষ্ঠানিকতা।

কাজি সাহেবও চলে এসেছেন। দোয়া-কালাম শুরু হলো। ঠিক তখন কলিমুদ্দিন কানে কানে জসিমকে বলে, ‘কাম তো সারছে!’
জসিম বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘কী হইছে?’
কলিমুদ্দিন ঘেমে যাওয়া মুখে জবাব দেয়, ‘আমার তো প্যাটে কামড় দিছে, খুব চাপ দিতাছে!’
জসিম হেসে বলল, ‘এইটা কোনো ব্যাপার অইলো! তুই আয় আমার লগে।’

দুজন উঠে এলো। অনেক খুঁজে টয়লেট পেল পুকুরের পাশে। জসিম বলল, ‘তুই ঢুইক্কা পড়, আমি এদিকেই আছি। কাম শ্যাষ অইলে ডাক দিস।’
কলিমুদ্দিন প্রবেশ করে। পাজামার গিঁট খুলতে গিয়ে আরও ভয়ংকর গিঁট লেগে যায়। কোনো কায়দা করেই গিঁট খুলতে পারছে না। পেটের মধ্যে গণ্ডগোলও বেড়ে চলেছে। কলিমুদ্দিন নিরুপায়। হঠাৎ বুঝতে পারল, তার পাজামা ভিজে উঠেছে, পা ঠান্ডা লাগছে। বাম হাত দিয়ে দেখে সন্দেহ সঠিক৷ মান-ইজ্জতের কিছুই রইল না।

ওদিকে কাজির কাজ প্রায় শেষ কিন্তু বর অনুপস্থিত। বরকে হন্যে হয়ে খুঁজছে সবাই। কলিমুদ্দিনের বাবা রহিমুদ্দিন খুঁজে পায় জসিমকে। জসিক তাকে জানায়, ‘কোনো চিন্তা নাই, কলিম কাছেই আছে। আমার লগে চলেন।’ গিয়ে দেখে টয়লেটে কেউই নেই! ভীষণ চিন্তায় পড়ে যায় তারা। সবার সন্দেহ হতে থাকে, কলিম পালাল কি না!

অনেক খুঁজে কলিমুদ্দিনকে পাওয়া গেল পুকুরের মধ্যে। চাঁদের আলোয় তার কালো মুখ জ্বলজ্বল করছে। বাবা রহিমুদ্দিন জিজ্ঞেস করে, ‘কী রে, এত রাইতে গোসল করোস ক্যান?’
কলিমুদ্দিন পুকুর থেকে উঠতে উঠতে জবাব দেয়, ‘আর কইয়েন না আব্বা, হাত ধুইতে গিয়া পইড়া গেছি!’

তারপর ভেজা কাপড় নিয়েই বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন করে কলিমুদ্দিন।