পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি : যশোরে প্রধানমন্ত্রী

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ০৫:০৬ পিএম, ২৪ নভেম্বর ২০২২ বৃহস্পতিবার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে এখন রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন সমালোচনা করছে। অথচ আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোনো সমস্যা হবে না।বৃহস্পতিবার (২৪ নভেম্বর) যশোরের শামস্-উল হুদা স্টেডিয়ামে যশোর জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা শুনছি। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ আমরা সবসময় মানুষের কথা চিন্তা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি।

মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্ত চুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা। বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এ বাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য। 

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা স্লোগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক ক্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া মোশতাক সবাই জড়িত। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটাই কারণে, এই জাতির পিতা আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছে। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, কিছু রেখে যায়নি। ভাঙা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।

তিনি বলেন, আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেজন্য তার সাজা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে দশ ট্রাক ধরা খেয়েছে, সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমিসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত নেতা জনগণকে কী দেবে? তারা কিছুই দিতে পারে না, শুধু রক্ত চুষে খেতে পারে।

সরকারপ্রধান বলেন, যশোরে বিএনপি উন্নয়নের কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে করেছে। ’৭৫ এর পর এদেশের আর কোনও উন্নয়ন হয়নি। আ.লীগ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোর আসতে পারে সেই রেললাইনের কাজ চলছে। যশোরে ৫০০ বেডের হাসপাতাল করে দিয়েছি।

নির্বাচনে যশোরের সবকটি আসন থেকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে যুবকদের অনেক কর্মসংস্থান হবে। যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনা জামানতে ৩ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এটা নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। এখনকার যুগে কেউ বেকার থাকবে না। কিছু না কিছু করতে পারবে। সেই সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনও দেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমি দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সামগ্রী এনেছি। রিজার্ভ মানুষের কাছে লেগেছে। যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬’শ ডলার। যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি, যাতে খাদ্য-ঘাটতি না দেখা দেয়। এজন্য আমি জমি অনাবাদী না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি।

‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলে জাতির পিতা যে প্রকল্প শুরু করেছিলেন, তার সেই পথ ধরে সারাদেশে গৃহহীনদের তালিকা করে জমিসহ ঘর করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে যাদের কোনও ঠিকানা ছিল না। এটা তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এই দেশের কোনও মানুষ ঠিকানা-বিহীন থাকবে না। যে বাংলাদেশ খালেদা জিয়া রেখে গিয়েছিল ৪০ ভাগ দারিদ্র্যতার হার, এটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যে হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিলো, তা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি।

তিনি বলেন, যশোরে ভবদহ জলাবদ্ধতার দূর করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর ফলে যশোর খুলনা সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহের জলাবদ্ধতার যেন না থাকে, সেই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো।

এর আগে, দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে তিনি যশোর শামস-উল হুদা স্টেডিয়ামে জনসভা মঞ্চে আসন গ্রহণ করেন। মঞ্চে উঠে তিনি হাত নেড়ে জনসভায় উপস্থিত নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এসময় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন। 

যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের পরিচালনায় জনসভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য দেন।