বঙ্গবন্ধু, আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ

সাব্বির মজুমদার

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ০৩:৩৮ পিএম, ২৩ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

আজ ঐতিহাসিক ২৩ জুন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে সব আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া দেশের প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দলটি এবার পা রাখছে ৭৪ বছরে।

দেশের সবচেয়ে প্রাচীন এই রাজনৈতিক সংগঠনটির রয়েছে বর্ণাঢ্য ইতিহাস। সেই শুরুর দিন থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সদস্য থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের মাঝে রয়েছে তারুন্যের জয়-জয়কার। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার মন্ত্রীমন্ডলেও রয়েছে এক ঝাক তরুণ নেতা এবং তারা বেশ ভালো করছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বয়সে তরুণ ছিলেন যখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের হাল ধরেন তখন তিনিও তরুণী ছিলেন।

১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার প্রায় সাড়ে চার মাসের মাথায় ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি তরুণ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে গঠিত হয় তৎকালীন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।

এরই ধারাবাহিকতায় ঠিক পরের বছর ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় আওয়ামী (মুসলিম) লীগের প্রথম কমিটি।

১৯৫৫ সালে এই দল ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে এবং নতুন নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। ১৯৬৬ সালের ৭ই জুন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষণা করেন বাঙ্গালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা। ৬ দফা আন্দোলনের পথ ধরে ঘটে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, তারপর ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়।

পরের বছর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ সংগঠিত হয় তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের।

১৯৭১ পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশের ধ্বংসাবশেষ, পিছিয়ে পড়া ভঙ্গুর অর্থনীতিকে একটা শক্ত কাঠামো দিতে স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নদ্রষ্টা নির্ভীক নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে তুখোড় নেতৃত্ব ও দৃঢ়তার কাজ করে যাচ্ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর সেই অপ্রতিরোধ্য নেতৃত্বে সেই উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতেই ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট কিছু রাজাকার মিলে এই মহাপুরুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল।

তারপর একই বছর ৩রা নভেম্বর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ চার সহকর্মী সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, এম মনসুর আলী ও এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে কারাগারের ভেতরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

১৯৭৫ থেকে ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা দলের হাল ধরা পর্যন্ত ১৯৭৭ ও ১৯৭৮ সালে দুইবার সম্মেলন হয়। এই সময়কালে দলের দুঃসময়ে দলের দায়িত্বে ছিলেন মহিউদ্দিন আহমেদ, বেগম জোহরা তাজউদ্দিন (আহবায়ক) ও আব্দুল মালেক উকিল। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক হলো নৌকা। সুদীর্ঘ এবং বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ইতিহাসের সাক্ষী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক সর্বপ্রথম জয়লাভ করে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে।

পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপ্রধান করে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ঘোষণা করা হয়। সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপ্রধান এবং বঙ্গন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রধান ও সশস্ত্র বাহিনীসমূহের অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক নির্বাচিত করা হয়।

তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী (অর্থ মন্ত্রণালয়), খন্দকার মোশতাক আহমেদ (পররাষ্ট্র, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়) ও এ এইচ এম কামরুজ্জামান (স্বরাষ্ট্র, কৃষি এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক মন্ত্রণালয়) কে মন্ত্রিপরিষদের সদস্য নিয়োগ করা হয়।

১৯৭২ সালের ১০ই জানুয়ারি বীরের বেশে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং মৃত্যুর আগে পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও ১৯৭৪ এর দশম সম্মেলন পর্যন্ত নিজ দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। 

১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৯৬ পর্যন্ত দীর্ঘ ২১ বছর রাষ্ট্র ক্ষমতার বাইরে থাকলেও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জয়ের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রথম সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। 

১৯৯১-১৯৯৬ এবং ২০০১-২০০৬ এ বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে মহান জাতীয় সংসদে অংশগ্রহণ করে।

তৎকালীন বিএনপি-জামায়াত সরকারের ২০০১-২০০৬ এর সময়কালের পর সেনা সমর্থিত ১/১১ এর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে ধানমন্ডির বাসভবন থেকে শেখ হাসিনা গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে তিনি মুক্তি পান।

২০০৮ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার মাধ্যমে জয়লাভ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবার সরকার গঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। তারপর যথাক্রমে ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী শব্দের অর্থ হচ্ছে গণমানুষ। সে অর্থে আওয়ামী লীগ মানে হলো গনমানুষের দল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বহু চড়াই-উৎরাই পেড়িয়ে আজও দলটি বাংলাদেশের গনমানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ যাবত ২১টি জাতীয় সম্মেলনের আয়োজন করেছে। এর মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৩তম সম্মেলনের পর থেকে সর্বমহলের সম্মতিক্রমে এবং জনপ্রিয়তার মানদন্ডে সবচেয়ে শীর্ষে থাকার কারণে পর পর ৮ বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন।

শুধু দলের কয়েক কোটি নেতা-কর্মী নয়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও শেখ হাসিনা এই দুই নামের মাঝে রয়েছে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের অকুণ্ঠ সমর্থন এবং আস্থা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেই বাংলদেশ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। স্বল্প আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে।

ভয়াবহ করোনার থাবাতে বিশ্ব যখন পর্যুদস্ত, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার উন্নয়নের অগ্রযাত্রা সমুন্নত রেখে, অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই এগিয়ে চলেছে করোনাকে মোকাবেলা করেই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনা এসেছিলেন বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে।

এদিকে, প্রমত্তা পদ্মার বুকে অনেক বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজ সগৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে এর নির্মাণ কাজ। সেতুটিকে নিয়ে এখন আর স্বপ্ন নয়, বরং ছুঁয়ে দেখার ক্ষণ গুনছেন দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। শনিবার (২৫শে জুন) বহুল প্রতীক্ষিত  স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বপ্নের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনের আগ মুহূর্তের এই শুভক্ষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করা, বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনীতি, অর্থনীতি ও সাংস্কৃতিক পরিমন্ডলে তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং রাজাকার তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত-শিবির মুক্ত বাংলাদেশ গড়াই হোক আমাদের আজকের অঙ্গীকার।