রডের দৈর্ঘ্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার চেয়ে বেশি পদ্মাসেতুর

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ০২:৫৩ পিএম, ২৩ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

দক্ষিণাঞ্চলবাসীর কাছে আশীর্বাদের আরেক নাম পদ্মাসেতু। এ যেন এক আলাদিনের চেরাগ; যা অন্তত ২১ জেলার মানুষের ভাগ্য বদলে দেবে। বিশেষ করে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে, গড়ে উঠতে শুরু করবে নতুন নতুন সব শিল্প কারখানা।

পদ্মাসেতু নিজেই একটি বিস্ময়ের নাম। খরস্রোতা পদ্মায় যে সেতু দুই পাড়কে বাঁধল, তার নির্মাণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের চেষ্টা আর কারিগরি চ্যালেঞ্জ সামলাতে গিয়ে বিশ্বের সামনে বেশ কিছু নজির স্থাপন করেছে বাংলাদেশ। এই সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে ধাপে ধাপে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে এবং সেসব সামাল দিতে পরিবর্তন করতে হয়েছে সেতুর নকশাও। প্রায় নয় কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু নির্মাণে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মূল সেতু নির্মাণ ও নদী শাসন কাজ শুরু হয়। মূল সেতু, নদী শাসন, জাজিরা সংযোগ সড়ক, মাওয়া সংযোগ সড়ক ও দুই পাড়ে সার্ভিস এরিয়া তৈরি—এই পাঁচ ভাগে সেতুর কাজ শুরু হয়। সদ্য শেষ হওয়া মূল সেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে রডের ব্যবহার হয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার টন। গর্বের বিষয় হচ্ছে, এসব রডের সবই দেশীয়।

পদ্মাসেতু ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে যত পরিমাণ রডের ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিয়ে গাণিতিক হিসাবগুলো বেশ চমকপ্রদ। সবগুলো রডকে যদি লম্বালম্বিভাবে এক টন করে রাখা হয়, তার মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ১ হাজার ২৯৬ কিলোমিটার। অথচ দেশের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তের দূরত্ব ৯৩১ কিলোমিটার। অর্থাৎ পদ্মাসেতুতে ব্যবহৃত রডের দৈর্ঘ্য টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ার দূরত্বের চেয়েও বেশি।

পদ্মাসেতুতে এত রড ব্যবহারের কারণ হিসেবে পদ্মাসেতু প্রকল্পের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের চেয়ারম্যান বসুনিয়া বলেন, সেতুর নিচে নদীতে ৪০টি ও দুই পাড়ে দুটি পিয়ার (খুঁটি) বসানো হয়েছে। সেতুকে টেকসই করতে নদীর অংশের খুঁটির নিচে চীন থেকে আনা তিন মিটার ব্যাসার্ধের ১২২ মিটার গভীর পর্যন্ত ইস্পাতের পাইল বসানো হয়েছে; যা বিশ্বের সবচেয়ে গভীর ও মোটা পাইল।

সেতুর সব উপকরণে সর্বোচ্চ মান নিশ্চিতের চেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ব্রিজটা যে বিয়ারিংয়ের ওপর বসেছে, সেটা একটা লেটেস্ট বিয়ারিং, পেন্ডুলাম বিয়ারিং। আমরা চীনে এর কোয়ালিটি টেস্টে গেলাম। এসময় ফুল স্কেলে লোড দেওয়ার পরে এখানে ভূমিকম্প দেখানো হয়। অনেকখানি নড়ে আবার জায়গায় চলে আসল। বিয়ারিং খুলে দেখা হল- ভেতরে কোনো ফাটল, স্ক্র্যাচ নাই। তিনবার করা হল এমন। তারপরও আমরা সেটা আমেরিকায় পাঠিয়ে টেস্ট করাই।”

পদ্মাসেতুতে যে ধরনের বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়েছে তা পৃথিবীর অন্য কোথাও ব্যবহার হয়নি বলে জানান শামীম জেড বসুনিয়া। এসব বিয়ারিং ৯ মাত্রার ভূমিকম্পেও সেতুকে টিকিয়ে রাখবে।