বন্যার্তদের সহায়তায় এগিয়ে আসুন, আল্লাহ খুশি হবেন

ইসলাম ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ০১:১৬ পিএম, ২৩ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত

সংগৃহীত

হে আল্লাহ! তুমি আমাদের শক্তি দাও, সাহস দাও, লাশ দাফন করতে একখন্ড শুকনো জমিন দাও।’ মানুষ কতটা বিপদে থাকলে এভাবে বিলাপ করে তা আর নতুন করে বলার দরকার নেই।

কিন্তু সময়ের তাগিদে এভাবেই লালমনিরহাট সদর উপজেলার কুলাঘাট ইউনিয়নে পূর্ব বড়ুয়া গ্রামের স্বজন হারানো আছিয়া বেগম-মনছুর মিয়া স্বজনদের লাশ নিয়ে বিলাপ করছিলেন। তখন উপস্থিত কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

প্রতিবেশি সবাই বানভাসী। দূর্বিসহ জীবন যাপন করছেন পানিতে। তাই সান্তনা দেওয়া ছাড়া তাদের সামনে আর কোনো পথ নেই। স্থানীয় সাংবাদিকদের ভাষায় সেই করুণ দৃশ্য চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন। সহযোগী এক দৈনিকে এমনই বিবরণ দিয়ে এমন একটি খবর ছাপা হয়েছে।

যে খবরে চোখের পানি ধরে রাখা কঠিন। বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। যেদিকে চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা হলেও অনুমান করা যায় ওপরের খবরের প্রেক্ষিতে। উদ্বেগের কথা হলো, উত্তরাঞ্চল পেরিয়ে দেশের মধ্যাঞ্চলেও বন্যার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ফসলি জমি, রাস্তা-ঘাট। বলতে গেলে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে ওই এলাকা।  
 
দুর্গত এলাকার মানুষজন ত্রাণের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে ত্রাণ তৎপরতা খুবই কম। অবশ্য বন্যার্তদের সাহায্যে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানোর পরও পর্যাপ্ত ত্রাণের অভাবে বন্যা দুর্গত অঞ্চলের মানুষ খুবই দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে। তাই আমাদেরও আকুল আহ্বান, দল মত নির্বিশেষে বন্যাদুর্গত অঞ্চলের মানুষের পাশে সবাইকে সব ধরনের ভেদাভেদ ভুলে এমন দুর্যোগময় মুহূর্তে এগিয়ে আসতে হবে।

বস্তুত প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাক ক্ষেত্রবিশেষ মানুষকে জীবনের কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি করে মহৎ প্রাণ ও ধর্মভীরু করে তোলে। যখনই কোনো বালা-মুসিবত পৃথিবীতে নেমে আসে, তখন মানুষ আল্লাহর ভয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আত্মবিশ্লেষণের সুযোগ পায়। তাই অতিবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে অসহায় মানবতার পাশে দাঁড়ানো দলমত-নির্বিশেষে সব শ্রেণি-পেশার ধর্মপ্রাণ মানুষের অবশ্য কর্তব্য। এটা ঈমানের দাবীও বটে।  

বিপদের সময় বানভাসি মানুষের সেবায় এগিয়ে এসে প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তির তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। বিপদগ্রস্ত লোকেরা সাহায্যের অর্থ, ত্রাণসামগ্রী, খাদ্য, বস্ত্র, ওষুধ, খাওয়ার স্যালাইন, বিশুদ্ধ পানি বা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে খুবই উপকৃত হয়।  

যারা অসহায়, ক্ষতিগ্রস্ত, অভাবী, গরিব-দুঃখী এবং অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থানহীন মৌলিক অধিকারবঞ্চিত মানুষকে ত্রাণসাহায্য করে ধৈর্যের পরীক্ষা দিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করেন, আল্লাহতা‍য়ালা তাদের প্রতি অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন। এ মর্মে কোরআনে কারিমে বলা হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) তোমাদের ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের শুভ সংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আপতিত হলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চিতভাবে তার দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। ’ -সূরা আল বাকারা: ১৫৫-১৫৬


হাদিস শরিফে দুনিয়াতে ক্ষুধার্ত ও তৃষ্ণার্ত মানুষকে অন্ন ও বস্ত্রদানের পরকালীন প্রতিদান ঘোষণা করে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়াতে মানুষকে খাদ্য দান করেছে, সেদিন তাকে খাদ্য দান করা হবে। যে আল্লাহকে খুশি করার জন্য মানুষকে পানি পান করিয়েছে, তাকে সেদিন পানি পান করিয়ে তার পিপাসা দূর করা হবে। যে মানুষকে বস্ত্র দান করেছে, তাকে সেদিন বস্ত্র পরিধান করিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করা হবে। ’ –সুনানে আবু দাউদ

বন্যায় অনেক দরিদ্র পরিবারের বাড়িঘর, সহায়-সম্পদ ও জীবন-জীবিকার ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়েছে। বহু রাস্তাঘাট, দোকানপাট, বসতভিটা, জমি-জিরাত ও ফল-ফসল নিশ্চিহ্ন ও বিলীন হয়ে গেছে। এ অবস্থায় বন্যাকবলিত অঞ্চলের অসহায় বানভাসি মানুষ কতটা দুঃখ-কষ্টের মধ্যে পড়েছে- তা সহজেই অনুমেয়।

তাই জরুরি ভিত্তিতে বন্যা উপদ্রুত এলাকায় মানবেতর জীবনযাপনরত বানভাসি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় ত্রাণ তৎপরতা, শুকনা খাদ্যসামগ্রী প্রদান, আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যাবশ্যক।

যেমনভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দিকনির্দেশনা প্রদান করে বলেছেন, ‘তোমরা ক্ষুধার্তকে খাদ্য দাও, অসুস্থ বা রুগ্ণ ব্যক্তির সেবা করো এবং বন্দীকে মুক্ত করো অথবা ঋণের দায়ে আবদ্ধ ব্যক্তিকে ঋণমুক্ত করো। ’ –সহিহ বোখারি

দেশের এমন কঠিন মুহূর্তে সমাজে যারা বিত্তবান, তারা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারেন না। ইসলামের নির্দেশনা অনুযায়ী মুক্ত হস্তে দান-সাদকা করে সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে পারেন। এমন সাহায্যকারীর দান কখনও বৃথা যায় না।  

অসহায় মানুষকে অন্নদানে বেহেশতের সুসংবাদ দিয়ে নবী করিম (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘একটি রুটি দানের কারণে তিন ব্যক্তিকে জান্নাতে পাঠানো হবে। ১. আদেশদাতা, ২. রন্ধনকর্তা‍, ৩. সেই পরিবেশনকর্তা- যে রুটি নিয়ে গরিবকে দিয়ে পরিবেশন করেছে। ’ –তাবারানি

শুধু বিধিবদ্ধ ইবাদত পরকালের নাজাতের জন্য যথেষ্ট নয়। বিপদগ্রস্ত ও দুস্থ মানবতার কল্যাণের জন্য দান-খয়রাত, জাকাত-সদকা, সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা অনেক সওয়াবের কাজ। যারা সমাজের অসহায় বিপন্ন, বন্যাদুর্গত ও ক্ষতিগ্রস্ত নিঃস্ব অর্ধাহারী-অনাহারী গরিব মানুষের অভাব দূরীকরণ, চরম ক্ষুধা নিবারণ ও দারিদ্র্য বিমোচনে দানের হাত সম্প্রসারণ করেন না অর্থাৎ দানশীলতা ও বদান্যতার চর্চা করেন না; ত্রাণ ও পুনর্বাসনের কাজে অংশ নেন না; তিনি আল্লাহ ও তার রাসূলের কাছে কখনোই প্রিয়ভাজন হতে পারবেন না।

বৈধ সম্পদ থেকে দরিদ্র ব্যক্তিকে দানের সওয়াব সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘কেউ হালাল উপার্জন থেকে দান করলে আল্লাহ নিজে সেই দান গ্রহণ করেন, সেটি উত্তমরূপে সংরক্ষণ করেন। একসময় সেই দানের সওয়াব পাহাড়তুল্য হয়ে যায়। ’ –সহিহ বোখারি ও মুসলিম

সুতরাং যে যে প্রান্তেই থাকুন, নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসুন। আপনার এই এগিয়ে আসায় যেমন বানভাসীরা উপকৃত হবে, তেমনি আপনিও উপকৃত হবেন কঠিন কিয়ামতের মাঠে।