শেরপুরে ‘কালো ধান’ চাষ করে সফল উদ্যোক্তারা

নিউজ ডেস্ক

সবার আগে সব খবর

প্রকাশিত : ১১:৩৮ এএম, ২ জুন ২০২২ বৃহস্পতিবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

খাদ্য ও কৃষি সমৃদ্ধ অঞ্চল শেরপুরে এবার প্রথমবারের মতো ‘ব্ল্যাক রাইস’ বা ‘কালো ধান’ চাষ করে সফল এখন উদ্যোক্তারা। 
শ্রীবরদী উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লীতে দেশের বাইরে থেকে ‘ব্ল্যাক রাইস’ এর বীজ সংগ্রহ করে প্রায় ৫ একর জমিতে লাগিয়ে ছিলেন উদ্যোক্তারা। এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই কালো ধান। সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ধান ও চালের কদর দেশের বাইরেও থাকায় এলাকার অনেকেই একদিকে যেমন এ ধান চাষে উৎসাহী হয়ে উঠছেন, অন্যদিকে তেমনি আগামী মৌসুমে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে ওই বীজ জেলায় ছড়িয়ে দিয়ে সফলতার নতুন দিগন্ত উন্মোচণ করতে চান তারা। শ্রীবরদী উপজেলার চককাউরিয়া গ্রামের ৪ বন্ধু মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন, স্বপন আহসান, নিশাত হাসান, শান্ত মিয়া এবং হাসধরা গ্রামের গোলাম রসুল চীন থেকে ৩ হাজার টাকা কেজি দরে ১৮ কেজি কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করেন। পরে তারা প্রথমবারের মতো ৫ একর জমিতে ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান লাগান। এতে সবকিছু মিলিয়ে আবাদে তাদের খরচ হয়েছে ১ লাখ টাকা। এরই মধ্যে সুন্দরভাবে গজিয়ে উঠে বাতাসে দোল খাচ্ছে সেই কাল ধান। ফলে তাদের চোখে-মুখে এখন সফলতার স্বপ্ন। 
কৃষি বিভাগের মতে, জেলায় প্রথমবারের মতো কালো ধানের আবাদ হয়েছে শ্রীবরদীতে। এ ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এ ধানগাছের পাতা ও রং সবুজ হলেও ধান ও চালের রং কালো। তাই এ ধানের জাতটি কালো চালের ধান নামে পরিচিত। ওষুধের গুণাগুণের জন্য ‘ব্ল্যাক রাইস’ চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এ চালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। 
উদ্যোক্তা মুক্তাদির আহম্মেদ নয়ন বলেন, ‘আমরা চিন্তা করেছি চাকরির পিছে না ঘুরে নিজেরাই কিছু করব। এ চিন্তা থেকেই আমরা চার বন্ধু মিলে চীন থেকে ব্ল্যাক রাইস ধানের বীজ সংগ্রহ করি। পরে তিন একর জমি লিজ নেই। সেই জমিতে বীজ রোপণের জন্য সবকিছু করে আমাদের মোট খরচ হয় প্রায় ১ লাখ টাকা। প্রথমে আমরা চিন্তায় ছিলাম যে, এ ধান হবে কি হবে না। পরে কৃষি বিভাগের দেখাশোনা ও পরামর্শক্রমে আস্তে আস্তে ফলন আসতে শুরু করে। ধীরে ধীরে ধানও পাকতে শুরু করে। আমরা হিসেব করে দেখেছি, ৩ একরের ক্ষেত থেকে বীজ, ধান বিক্রি ও খাওয়াসহ প্রায় ১০ লাখ টাকা আমাদের আয় হবে।’ 
উদ্যোক্তা স্বপন আহসান বলেন, ‘এ বীজ আমরা জেলায় ছড়িয়ে দিতে চাই। এ জন্য আমাদের কৃষি বিভাগের সহযোগিতার প্রয়োজন আছে। আমরা চিন্তা করেছি, ৩ হাজার টাকা কেজি দরে বীজ কিনে আনলেও আগ্রহী কৃষকদের ১ হাজার টাকা দরে বীজ দেব। কারণ, কৃষকেরা যেন খুব সহজে, অল্প খরচে ও বেশি লাভে ডায়বেটিস এবং ক্যানসার প্রতিরোধক হিসেবে এ ধান চাষ করতে পারে।
হাসধরা গ্রামের কৃষক গোলাম রসুল জানান, আমি বিদেশ থেকে এ ধানের বীজ সংগ্রহ করি। কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি প্রায় ২ একর জমিতে এ ধান চাষ করেছি। এরই মধ্যে কালো ধান কাটা শুরু হয়েছে। বেশি লাভজনক ও পুষ্টিগুণে ভরপুর থাকায় আগামীতে এ কালো ধান চাষে উৎসাহি হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকেরা। একইভাবে আগ্রহী কৃষকদের একজন চককাউরিয়া গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বাপু হুনতাছি এ ধানে খুব বেশি লাভ। আমি তাদের বলেছি আমাকে যেন চারা দেয়, আমি আগামীতে লাগামু এক একর জমিতে। কৃষি অফিসও কইতাছে, এ ধান নাকি ওষুধের মতো কাজ করে। তাই আগামীতে লাগামো।’ কৃষক ফকির মিয়া বলেন, ‘এই নতুন ধান আইছে, দেখতে কালা কালা। আবার হুনতাছি বিরাট লাভ, লাগাইতে খরচও কম। তাই আমি সামনের বার আবাদ করমু। ধানের চারা চাইছি তাদের কাছে, তারা দিবার চাইছে। এজন্নি ১ হাজার টাকা করে চাইতাছে।’  
শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ূন দিলদার বলেন, উদ্যোক্তারা বারবার আমার অফিসে এসেছে। আমরা তাদের সার্বিক সহযোগিতা করেছি। এ ধান চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ানোর জন্য পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ধান চাষ বাড়ালে কৃষক খুবই লাভবান হবে। 
শেরপুরের কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক ডা. মুহিত কুমার দে  জানান, এরই মধ্যে আমরা ওই ৫ উদ্যোক্তার ধানক্ষেত পরিদর্শন করেছি। ধান খুব ভালো হয়েছে। আমরা চাচ্ছি, তাদের কাছ থেকে বীজ সংগ্রহ করে জেলায় অন্যান্য কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে। এ জন্য কৃষি বিভাগ সব সময় তাদের পাশে থাকবে। তার মতে, এ ধান সৌন্দর্য ও পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়াও ওষুধের গুণাগুণের জন্য ‘ব্ল্যাক রাইস’ চালকে ‘ওয়ার্ল্ড সুপার ফুড’ বলা হয়। তাই এর দামও অন্য সব চালের তুলনায় অনেক বেশি। বিশ্বের ধনী দেশগুলোতে এ চালের ব্যাপক চাহিদা।